আমার ভ্রমণ কথন- ১ (লেক পাহাড়ের রুমা)
সময়টা ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস। কোন এক শরতের ভোর। জীবনে প্রথমবারের মত
কেওক্রাডং সামিটে যাচ্ছিলাম। আমরা ১১ জনের একটি টিম। সকাল সকাল সবাইকে ফোন করে
জাগিয়ে তুলে চলে আসলাম কর্ণফুলী নতুন ব্রীজ বাস স্ট্যান্ডে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আমরা শহুরে পাব্লিকরা সকাল সকাল পৌঁছে গেলেও চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের হলে থাকা পাব্লিকরা আসতে আসতে ৯ টা বাজালো। যাতায়াত
ব্যবস্থার দোহায় দিলেও আসল কারণ হল,
উনারা
ঘুম থেকে জীবনে এই প্রথম এত আর্লি উঠেছেন। যাই হোক, ৬ টার প্ল্যান এখন ৯ টা পেরুলো। এদিকে ভয় হল কিভাবে আজকের মধ্যে রুমা
পৌছাবো। ৩ টার পর কোন গাড়ি বগালেকের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিতে পারবেনা। সব
ক্যালকুলেশন বলছে ৩ টার আগে আমরা কোন ভাবেই রুমা বাজার পৌছাতে পারবনা। শেষমেশ
কক্সবাজারগামী ইউনিকের গাড়িতে উঠে পড়লাম। মাত্র দেড় ঘন্টায় আমরা সাতকানিয়া
কেরানীহাট। বেঁচে গেল পুরো দেড় ঘন্টা। সেখান থেকে আচমকা একটা মাহেন্দ্র পেয়ে গেলাম বান্দরবন পর্যন্ত তাও লোকালের
চেয়ে কম টাকায় রিজার্ভে। আধা ঘন্টায় বান্দরবন বাস স্ট্যান্ড। তাড়াতাড়ি করে টমটমে
চড়ে চলে এলাম রুমা যাওয়ার বাস স্ট্যান্ডে। এসে দেখি কোন চাঁদের গাড়ি নেই। একটি
মাত্র বাস আছে ১১.৩০ টার। এটাই লাস্ট বাস। আর কি করার। হাল্কা নাস্তাপানি করে উঠে
পড়লাম বাসে। এটাই ছিল লাইফের ভয়াবহ এক ডিসিশন। কলিজা মনে হয় হাতে নিয়ে ৪ ঘন্টার এক
ভয়াল জার্নি ছিল এটি। শুধু ভাবছিলাম বাস টা কাঁত হয়ে খাদে পড়ে যাচ্ছেনা কেন? এই রাস্তায় ছোট চাঁদের গাড়িতে চড়াই রিস্ক। আর সেখানে লোকাল
বাস!!!
এদিকে গাইড শাহজান ভাই অনেক কষ্টে আর্মিদের বুঝিয়ে শুনিয়ে ম্যানেজ করে
রেখেছেন যে আমাদের একটা টিম যাচ্ছে। তাই একটু লেইট হলেও যাতে সেদিনের জন্যে ছেড়ে
দেয়। ৩.৩০ টায় রুমা ব্রীজঘাটে নামলাম। কি সুন্দর দৃশ্য। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে
সাংগুর কলকলতান। কিন্তু এই দৃশ্য বেশিক্ষণ দেখা হলনা। দ্রুত লোকাল চাঁদের গাড়িতে
উঠে রুমা বাজার চলে আসলাম। কথা হচ্ছে,
অনেক
দেরী করে ফেলেছি। তাও যাওয়ার পারমিশন পেলাম। আর্মি ক্যাম্পে নাম রেজিস্ট্রি করলাম।
এরপর একটা ফর্ম হাতে পেলাম। আমি বাকিদের জিজ্ঞেস করছি এটি কি? এটা হল সেই অঙ্গিকারনামা যাতে লিখা ছিল যে আমার মৃত্যুর
জন্যে কেও দায়ী থাকবেনা। আহা,
জীবনে
এই প্রথম নিজের জীবনের ডিসিশন সম্পূর্ণ নিজে নিলাম। আরিফুর বলছিল, আমি মরলে আমার মা বাপের কি হবে? কথাটা শুনেই কেমন জানি লাগছিল। যাই হোক। আর্মিদের থেকে
একটা শুভকামনা নিয়ে উঠে পড়লাম আরেকটি রিজার্ভ চাঁদের গাড়িতে। গাড়িটি ২ ঘন্টায়
আমাদেরকে শৈরাতন পাড়ায় নামিয়ে দিল। শরতের সিজনে এরপরে আর গাড়ি যায়না। তখন বাজে
সন্ধ্যা ৬ টা। হ্যা, জীবনে প্রথম
রাতের ট্রেকিং। তাও আবার বান্দরবনে। জানিনা, কি হবে সামনে। সন্ধ্যার নাস্তা পানি সেরে হাঁটা দিলাম। এ এক অন্যরকম অনুভূতি।
ধীরে ধীরে কালো অন্ধকার নেমে আসছে চারদিকে। আধ ঘন্টা হাটার পর হঠাৎ এক দৃশ্য
চোখে পড়ল।
এই দৃশ্য আমি মৃত্যুর আগে মূহুর্ত পর্যন্ত মনে রাখব। গ্রুপের সবাই
অন্ধকারের মাঝে থেমে গেল। কি জোঁকের ভয় আর পাহাড় থেকে পড়ে যাওয়ার ভয়। সবার চোখ এক
জায়গায়। পূর্ব দিকে সাদা শুভ্র মেঘের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে গোলাকার থালার মত
পূর্ণিমার চাঁদ। মুহূর্তের মধ্যে চারদিকে রুপালী আলোর আভায় ছেয়ে গেল। সবাই হাতের
টর্চ, মোবাইলের লাইট অফ করে দিলাম।
এই দৃশ্য দেখতে দেখতেই একে একে কমলাবাজার, প্রং পুং পাড়া ক্রস করে ফেললাম। পথে কমলাবাজারের কমলাও খেয়েছিলাম। এখানের
বাজার মানে ২/৩ টা ছইয়ের ঘর আর কি। বগামূখ পাড়ার কাছেই আমরা। একটা জায়গায় বসে
পড়লাম। ওখান থেকেই বগা লেকের কটেজগুলোর হালকা আলো দেখা যাচ্ছিল। জীবনে কখনো রাতে
ট্রেকিং করিনি। কিন্তু এত সুন্দর হতে পারে তাও কখনো ভাবিনি। রাত ঠিক ৮.৩০ টা বাজে
আমরা বগা লেইকের আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্টিং করলাম। শাহজান ভাইয়ের সাহায্যে একটা
কটেজ ম্যানেজ করলাম। এখানে খুব অল্প খরচে থাকা খাওয়া যায়। যেটা আপনি মেইন বান্দরবন
সিটিতে কল্পনাও করতে পারবেন না। দিদির কটেজটি ছিল কটেজ কাম রেস্টুরেন্ট। ডিম
খিচুরি খেয়ে নিলাম। এখানের খিচুরির স্বাদ অন্যরকম। একটা মশলা দেয় যেটা অনেকটা
ম্যাগি নুডলসের মসলার মত। ৯ টার মধ্যে খাওয়া পর্ব শেষ। এরপর গোসল পর্ব। বগা লেকের
পানিতে। পূর্ণিমার আলোয় লেকের নিচে মাছ সহ দেখা যাচ্ছে। একটা ঘাট আছে লেকে।
মিসবাহকে সামনে রেখে গোসল টা সেরে নিলাম। আমাদের গ্রুপের সবচেয়ে ভাল ট্রেকার সে।
আবার সাঁতারেও এক্সপার্ট। নিজে সাঁতার না জানায় সেইফটি প্রিকশন হিসেবে তাকে সামনে
রেখে গোসল সেরে নিলাম। এরপর ভাল কাপড় চোপড় পড়ে শুরু হল রাতের আড্ডা। চলল ১১ টা
পর্যন্ত। মৃদু সুরে চলল হালকা গান। আমাদের শাওন, গাইড শাহজান ভাইয়ের সাথে ভবিষ্যৎ ব্যবসা পরিকল্পনাও সেরে নিল এই ফাঁকে। কমিউনিটি
ট্যুরিজম সেক্টরে তার বেশ অবদান রয়েছে। সকালে কেওক্রাডং যাইতে হলে সকাল সকাল উঠতে হবে।
তাই আর্লি ঘুম যাওয়া প্রয়োজন। কটেজের ২য় তলায় আমাদের রুম। আমার রুমে ছিল মিসবাহ, তৌসিফ,
নাজমুল, রাফি। বাকি ৬ জন অন্যরুমে। রাতে ২ টা বাজেও উনারা কার্ড
খেলায় মগ্ন ছিলেন। আমাদের আবার ঘুম দরকার। তাই অত বিষ নাই।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবলাম আমিই ফার্স্ট। বের হয়ে দেখি আমার আগে মডেল আরিফ
উঠে বসে আছে। সে লেইকের পাড়ে বসে ঠান্ডা কুয়াশা খাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর মুরাদ ও উঠল।
ভোরের আলো ফুটে উঠার আগেই বগা লেক পাড়ার আশপাশে কিছু ফটোসেশন সেরে নিলাম। পাহাড়ের
উপর মেঘ, সে যে কি অপরূপ
দৃশ্য। ৮ টার মধ্যে নাস্তা পানি রওনা দিলাম। গ্রুপের হিসাব নিকাশের দায়িত্ব আবার
আমার উপর। এটা একটা বাড়তি প্যারা ছিল যাত্রাপথে। যাই হোক। ৪ ঘন্টার ট্রেক। উঠে হবে
২০০০ ফিট থেকে ৩১৭২ ফিট। মাঝখানে পড়বে বেশ কয়েকটি পাহাড়। এটাই মূলত জানি।
ঘন্টাখানেক হাঁটার পর পেলাম অসাধারণ লতাঝিরি। সেখান থেকে অল্প কিছুদূর গিয়ে হাতের
ডানে চিংড়ি ঝিরি। সেটি দিয়ে উঠতেই চোখে পড়ল বিশাল চিংড়ি ঝর্ণা। গা ভিজিয়ে কিছু
ফটোসেশন করে আবার নেমে পড়লাম মূল ট্রেইলে। সত্যি বলতে সীতাকুণ্ড মিরসরাই এ এত
ঝর্ণা দেখেছি তাই এই ঝর্ণায় বেশি সময় কাটানোটা যুক্তিযুক্ত মনে হলনা।
এখান থেকে আধা ঘন্টায় কেওক্রাডং সামিট করা যাবে। কিছুদূর হাটার পর বাঁধ
সাজে বৃষ্টি। শরতের বৃষ্টি হয় মুষলধারে। তবে বেশিক্ষণ থাকেনা। সবাইকে কাক ভেজা করে
দিয়ে আবার রোদ উঠে গেল। মেঘ গুলো মনে হচ্ছিল তুলার মত। বৃষ্টি পড়ায় পায়ের নিচে এতই
পিচ্ছিল হয়ে গেল যে পা রাখাই দায় হয়ে গেল। সাথে শুরু হল জোঁকের হামলা। শেষমেশ পৌছে
গেলাম লালা দার কটেজে। এখানে গোসল এবং খাওয়া দাওয়া সেরে ঠিক ১ টা বাজে কেওক্রাডং
এর সামিট পয়েন্টে উঠলাম। এখানে একটা আর্মি ক্যাম্প আছে। তার পাশেই একটা পাকা
ছাউনি। এখান থেকে পুরো রুমা চোখের সামনে।
গল্প করতে করতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেল টের পেলাম না। যখন বুঝলাম যে
অন্ধকারের মধ্যে দূরের পাড়া গুলোতে হালকা সোলার লাইটের আলো জ্বলছে তখন বুঝলাম।
বিকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের গরীবের ফোক সিংগার বাউল আরিফুর রহমান মাতিয়ে
রেখেছিলেন। এদিকে ঢাকা থেকে এক দল এসেছে। তারা মিল্কি ওয়ে নিয়ে গবেষণা করছিল। খুব
দামী ক্যামেরা ছিল তাদের হাতে। ছাউনিটা আপাতত তাদের জন্যে ছেড়ে দিলাম। জোঁকের ভয়ে
বেচারারা সারাদিন কটেজেই ছিল। আমরা পাশের হ্যালিপ্যাড গ্রাউন্ডে চলে আসলাম। এই
জায়গাটা একেবারে ন্যাচারাল। আজেকেও পূর্ণিমার চাঁদ রয়েছে। ঠান্ডাও পড়ছিল বেশ। ৯
টার মধ্যে খিচুড়ি ভাত খেয়ে সবাই কম্বল নিয়ে আবারো আসলাম হ্যালিপ্যাডে। চাঁদের
আলোতে পাহাড় গুলোকে যে কি লাগছিল। তার উপর দূরে মেঘের ভেতরে বজ্রপাত হচ্ছিল। অথচ
আমাদের মাথার উপর কি পরিষ্কার। এই দৃশ্য দেখে রাসেল আর আনসার ডিবেট করছিল, কিভাবে এটা হয়। বাকি সবাই ফটোসেশনে ব্যস্ত। সবার মেমরী
ফুল হয়ে যাচ্ছিল। বৃষ্টিতে
ভিজে আমার মোবাইলের ক্যামেরা নষ্ট হয়ে যায়। তাই ডিএসএলআর টাই ছিল একমাত্র ভরসা।
রাতে ২ টা বাজে হঠাৎ ডাকাডাকি শুরু হল। "মেঘ আইসসে, মেঘ আইসসে"। বাইরে দৌড়ে বের হলাম। কিচ্ছু দেখছিনা।
খালি ক্যাম্পের লাইটের ঝলক চোখে এসে পড়ছে। আর বাকি সব ঝাপসা হয়ে গেছে। গায়ে ঠান্ডা
ঠান্ডা ভেজা বাতাস। শীতল এক অনুভূতি। এই তাহলে মেঘ। ৫ মিনিট ছিলাম মেঘের সাগরে।
এরপর কোথায় উধাও হয়ে গেল। আমরাও আস্তে আস্তে রুমে ঢুকে পড়লাম সবাই। আবারো ঘুম। এই
ঘুমে একেবারে ভোর। সকালে উঠে আবারো সামিট পয়েন্টে গিয়ে ফটোসেশন। দূরে দেখা যাচ্ছে
দার্জিলিং পাড়ার উপর মেঘ এসেছে। পরিষ্কার তুলার মত সাদা মেঘ। সেই ফাঁকে কিছুক্ষণ
পর পর ক্যালসিয়াম খাচ্ছিলাম। এখানে চা নেই। আছে ক্যালসিয়াম। সোজা বার্মা থেকে আসে।
স্বাদ ও গুণে অনন্য। এরপর আস্তে আস্তে সব ঘুছিয়ে নিলাম। সবাইকে বিদায় দিয়ে ফিরতি
পথ ধরলাম।
এবার গতি আগের চেয়ে বেশি। ৩ ঘন্টায় বগা লেক। সেখান থেকে ক্যাম্পে হাজিরা
দিয়ে এবার রুমা বাজারের পথ ধরলাম। চাঁদের গাড়ি ঠিক করল শাহজান ভাই। ঘন্টাখানেকের
মধ্যে রুমা বাজার। এই পথটা যে কত ভয়ানক। আরিফুর তো বলেই বসল, নৌকায় যাওয়ার কি কোন সুযোগ নেই? সেখান থেকে হয়ত নৌকায় আসা যায়না। তবে রুমা বাজার থেকে
ঠিক করলাম নৌকা। দুপুরের লাঞ্চ সেরে উঠে পড়লাম নৌকায়। বিকাল থেকে সন্ধ্যা। ৩ ঘন্টা
মত লেগেছিল। বাসের চেয়ে পুরো ১ ঘন্টা কম। আবার রিফ্রেশিং ও বটে। সাংগুতে রাতের
বেলায় নৌকা চড়া আর আকাশের তারা গুনার মধ্যে একটা মাদকতা রয়েছে। নিস্তব্দ চারদিকে
কেবল পানির আওয়াজ আর আমাদের দু একজনের মুখে মৃদু স্বরের গান। সে সময় বৌদ্ধ
সম্প্রদায়ের কি উৎসব জানি ছিল। রাতের আকাশে চাঁদ তারার পাশাপাশি চোখে পড়ছিল হাজার হাজার
ফানুশ। এসব দেখতে দেখতে আর ট্যুরের কথা ভাবতে ভাবতেই চলে আসলাম সাংগু ব্রীজ ঘাটে। পথে
আবারো একটা রাতের ইউনিকের বাস পেলাম। সেটায় চলে নামলাম সাতকানিয়ার বাজালিয়ায়।
তৌসিফের বাড়িতে।
এখানেই শেষ না। প্ল্যান ছিল বার বি কিউ পার্টি ও হবে। সবাই টায়ার্ড। অথচ
বান্দরবন টাউন থেকে আসার সময় পরটা,
কেরোসিন, কয়লা নিয়ে এসেছি। তাই করতেই হবে। নাজমুল কাবাব মসলা আর
সস দিয়ে মেরিনেটের কাজ সারল। আমি,
রাফি
মিলে সালাদ বানালাম। আনসার,
মিসবারা
ইটের চুলা বানালো। আরিফ
পুরোনো একটা ছাতার শিক ধুয়ে মুছে খুলে নিয়ে আসল। সবাই মিলে কাজে নেমে পড়লাম। কয়লা
গরম হওয়ার পর শুরু হল ফ্রাই। ১২.৩০ টা বাজলো রান্না শেষ করতে। গ্রামের সবাই ঘুম। আর
আমরা এতক্ষণে আহার করছি। সেদিনের সেই বার বি কিউর স্বাদ আজো মুখে লেগে আছে। এখন
ঘুমাতে হবে। রাত অনেক হয়েছে। সকালেই তো চলে যাবো শহরে। এই সব একদিন স্মৃতি হয়ে
রবে। স্মৃতি হয়ে রবে আজীবন।
ব্যাপারটা আসলে একটা পাহাড়ের চূড়ায় উঠলাম আর চলে আসলাম না। ব্যাপারটা হল
জীবনের ষোল আনা খুঁজে পাওয়া।
Comments
Post a Comment